বেশ মনে আছে, সেসব
ভোরের শিশির ভেজা নরম দূর্বা ঘাসে
পা দু'খানি মাড়িয়ে গিয়েছি,
অথচ আজ আমার পা দু'খানি
পিচগলা পাথরের বুকে হেঁটে চলে নিত্যদিন।
আসছে শীত বাড়বে দুর্ভোগ। না এখন আর শীত তেমন করে আসে না। বললে কি কেউ মানতে চাইবে- আমার একটির বেশি গরম কাপড় নেই। লাগে না তাই নেই। শীত আর আসে না তেমন করে- আমাকে জড়াতে। বোধকরি এই শহরের কাউকে আর শীত তেমন করে জানান দিতে পারে না। পারবে কি করে চারদিকে চোখ মেলে তাকালেই দেখা যায় শুধু বড় বড় ইমারত। এ যে আধুনিক নাগরিক সভ্যতা। এ শহরের বাড়ির জানালার পাশে ডালিম বা পেয়ারার গাছ দেখা যায় না। শোভা পায় টবের গাছ। যা কিনা মরুভূমির বুকে এক ফোঁটা জলের মত। পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে, সাবধান, হুশিয়ার।
এখন আর শীত তেমন পড়ে না। শীত দেখেছি আমরা- আমাদের সময়ে-'দুপুরের রোদে লেপ-কাঁথা শুকাতে দিতে হত। একটু পর পর মা বলত যাও গিয়ে লেপটাকে উল্টিয়ে দিয়ে আস, নইলে রাতে তো ঠাণ্ডায় ঘুমাতে পারবে না।' রাতে লেপের ভিতর ঢুকে তারপর সেই লেপ গরম হতে রাতের এক ভাগ শেষ হয়ে যেত। ইস্ সকাল না হতে মায়ের চিৎকার-'আর কত লেপের ভিতর- এবার বের হয়ে আয়।' তারপরও চুপ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতাম। কিছুক্ষণ পর মা এসে লেপ সরিয়ে দিতেন। এই সময় মাকে পৃথিবীর সেরা ভিলেন মনে হত।
সেই সকালে মুখ ধোয়াও ছিল আর এক যন্ত্রণার। পানি যা ঠাণ্ডা! তারপর পায়ে মোজা, হাতে মোজা, গায়ের জামার উপর বর্ণিল সোয়েটার, মাথায় টুপি বা মাফলার জড়িয়ে পড়তে বসতাম জড়োসড়ো হয়ে। তখন মায়ের হাতের তৈরি লাল-চা আর মুড়ি ছিল একমাত্র সান্ত্বনা। গত রাতে মায়ের হাতের বানানো চিতই পিঠা খেজুর রসে ভেজানো, যা এই সাত সকালে খেতে দিত, একটার বেশি খাওয়া যেত না কারণ রসে ভিজে ফুলেফেঁপে থাকত।
রোজ ভোরে মায়ের মিহিস্বরে বলা, 'যা তো বাবা
ও পাড়ার তোর গাছি নানুর কাছ থেকে
এক হাঁড়ি রস নিয়ে আয়' তারপর
সেই রসে ভেজা চিতই পিঠা খাওয়ার সুখ
আহ! সে রসের খোঁজ আর কোন তল্লাটে নেই।
মনে পড়ে, রাতে যখন আম্মা পিঠা বানাতেন আমি পাশে বসে থাকতাম। তখনই খেতাম আর বই পড়তাম। আম্মার আর পিঠা তৈরি শেষ হয় না। আমার চোখে ঘুম। পড়তে আর ভাল লাগছে না। উঠে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে- উঠ, ভাত খেতে হবে না? ঘুম চোখে ভাত খেতাম। পিঠা আর খাওয়া হত না। বলতাম, সকালে খাব।
আজতো খেলাম চিতই পিঠা। এরপর কয়েকদিনের বিরতি। এরপর আবার মায়ের কাছে আবদার, 'মা, ভাপা পিঠা খেতে চাই।' মা বলতেন, 'একটু সময় দিতে হবে।' তারপর চাল শুকানো, ভিজানো, গুড়ো করা আবার শুকানো। এরপর আয়োজন করে পিঠা বানাতে বসতেন আম্মা। এদিকে আমার বুকের মধ্যে আনন্দ। কত প্রিয় পিঠা আমার। মা ছাড়া আর কেউ বানালে আমি খেতে পারি না। 'প্রিয় ভাপা পিঠা, কেমন আছ তুমি? গত বছর তোমাকে খেয়েছিলাম। এবারও তোমাকে আমি খাব। এইতো কিছুদিন আগেই আমি তো তোমাকে কয়েকবার খেলাম।' কিন্তু ভাপা পিঠা বানাতে মায়ের অনেক পরিশ্রম হয় জানি আমি। তবুও কি করব মন যে চায়।
শীত সোনা তুমি আমারে কমও ভোগাও না। সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে- গোসল করতে গিয়ে আধঘণ্টা ভাবতে হত, গোসল করব কি না? না এখন আর তেমন করে তোমাকে নিয়ে ভাবতে হয় না। ঠোঁট ফেটে কি বিচ্ছিরি অবস্থা হয় অনেকেরই। কিন্তু আমার পরীর ঠোঁটের এরকম অবস্থা হয় না। কেন হয় না? কারণ শীত তোমার ছোঁয়ার আগেই আমার স্পর্শ পৌঁছে যায় পরীর ঠোঁটে। শীত তোমাকে আমি হারিয়ে দিলাম, এই এক জায়গায়। ভাল কথা শীত, তোমাকে আমরা অনেক পছন্দ করি, বুঝলে? তুমি হারিয়ে যেও না এই বাংলা থেকে, কেমন?
দূর ছাই আজকালকার শহুরে শীত আমার না,
ফেলে আসা সেই সব শীতের স্মৃতি নিয়েই
পড়ে আছি এই ইট-পাথরের শহরে!
তুমি আমি আর শীত, আমরা তিনজন। শুধু সাথে মায়ের হাতে যত্নে বানানো কাঁথা ছাড়া আমরা কোন শীতের রাতই কাটে না। অনেকেই এখন আর কাঁথাকে আপন করে নেয় না, বিশেষ করে শহুরে লোকজন। তাঁদের কাছে বিষয়টা নাকি বেশ পুরানো। তাঁরা এখন লেপ-তুলতুলে কম্বলকেই তাঁদের কাছে টেনে নেয় কিন্তু বিশ্বাস করেন লেপ-কম্বলে নিজেকে জড়ালে দম বন্ধ হয়ে আসে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমার কাছের মানুষটাও আমার ছেলেমানুষি মেনে নিয়েছে। এই শীতে মায়ের আঁচল আমাদের জড়িয়ে রাখবে আশা করি।
০৮ ডিসেম্বর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪